শ্রী শ্রী সঙ্গীতা ১ম খণ্ড ভারত সেবাশ্রম সংঘ থেকে অমৃতকথা

দুঃখ-দৈন্য বিপদাপদ মানুষের আসিয়াই থাকে। উহাতে বিচলিত হইলে চলিবে না। যে ছেলে কোন অভাবের তাড়নায় নয়, কোন সাময়িক উত্তেজনাপরবশ হইয়াও নয়—সংসারকে ত্যাগ করিতে পারে,—তাহার ভিতর কি কোন শক্তির অভাব থাকিতে পারে? এখন দুর্বলতা পরিত্যাগ কর, বীরবেশে, সমুন্নতবক্ষে কর্মক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইয়া যথােচিত বীরত্বের পরিচয় দাও। নিমেষের মধ্যে যা-কিছু বাসনা আছে ধংস-বিধংস করিয়া ফেল। আর আলস্য দীর্ঘসূত্রতা লইয়া বসিয়া থাকিবার সময় নাই। খুব চিন্তাশীল হইতে হইবে। এখনও কি চঞ্চলতা লইয়া বসিয়া থাকিবে? অবিলম্বে সে-সব জন্মের মত বিদায় দাও। নিয়ন্তা তােমাদের উপর কত বড় গুরুভার, কত বড় কঠোর দায়িত্ব চাপাইয়াছেন, তাহা কি সতত চিন্তা কর না? কৈ তােমাদের সেই আত্মবিশ্বাসযার বলে বলীয়ান হইয়া সমগ্র দেশ জয় করিবে? অনেক সময়ে অনেক পরীক্ষার মধ্যে পড়িতে হইবে; সাবধান—মান-মৰ্য্যাদা যেন সব সময় ঠিক থাকে। বর্তমানে তােমরা যেরূপ সুযােগ-সুবিধা পাইয়াছ।
সেইরূপ সুযােগ-সুবিধা খুব কম লােকেই পাইয়া থাকে। এই সুযােগ-সুবিধা যেন কোন মতেই উপেক্ষিত না হয়। বিবেক-বৈরাগ্য ত্যাগীদের একমাত্র সম্বল। তােমাদিগকে ত্যাগের জ্বলন্ত প্রতিমূৰ্ত্তি হইতে হইবে। তােমরা সনাতন আদর্শে গঠিত হইয়া, আৰ্য-ঋষিদের আসনে উপবেশন করিয়া এই অধঃপতিত দেশকে নীতি ও ধর্মের পথে পরিচালিত করিবে। নীতি ও ধর্মের কথা প্রচার করিবার জন্য, ত্যাগ-সংযম-সত্য-ব্রহ্মচর্য্যের মাহাত্ম্য বিঘােষণ করিবার জন্য তােমরা জন্মগ্রহণ করিয়াছ—এই বিশ্বাস যেন নিয়ত থাকে। এই জাতীয় বিশ্বাসই যাবতীয় উন্নতির মূলীভূত কারণ।
নিজে প্রস্তুত হও, যথােচিতশক্তি-সামর্থ্য সঞ্চয় কর; তােমরা এক একজন এক একটি সিংহশিশু, অযুত হস্তীর বল তােমাদের আছে। তােমরা যে-কোনাে কাজ করিতে পার—এই বিশ্বাস খুব চাই। দুর্বলতাই পাপ, কখনও যেন কোন দুর্বলতা আসিতে না পারে। অতি শীঘ্রই তােমাদিগকে আদর্শ স্থানে দাঁড়াইতে হইবে। তােমাদের আদর্শে, তােমাদের অনুকরণে হাজার হাজার লােক গঠিত হইবে। মানুষ যাহা করিতে পারে—তােমরা তাহা অবশ্যই করিতে পারিবে। বিফলতা আসিলে বুঝিবে—চেষ্টা-যত্ন-উদ্যোগের ত্রুটি আছে।খুব ধ্যানজপ কর—তবেই সব বুঝিতে পারিবে। জপধ্যান ভিন্ন চিত্ত শুদ্ধ হয় না। চিত্ত শুদ্ধি ব্যতীত শুদ্ধ জ্ঞান জন্মে না, শুদ্ধ জ্ঞান ব্যতীত ধর্মতত্ত্ব কখনও উদ্ভেদ হয় না। যে পৰ্য্যন্ত ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠিত না হয় সে-পৰ্য্যন্ত অন্য লােকের অঙ্গ স্পর্শ করিবে । যাহার সহিত মিশিলে, যাহাতে স্পর্শ করিলে তােমার চিত্তবিকার জন্যে তাহার সহিত না মিশিতে, তাহার অঙ্গাদি স্পর্শ না করিতে লিখিতেছি। তােমার পূৰ্বকৃত অপরাধের জন্য বিশেষ কিছু ভাবিবার নাই।